আমেরিকা , রবিবার, ১২ মে ২০২৪ , ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শেলবি টাউনশিপে অবৈধ ওপিওড প্রেসক্রিপশনে ডাক্তারের ১২ বছরের সাজা ডেট্রয়েট চিড়িয়াখানার সিম্বা সিংহ মিশিগানকে বিদায় জানায় যৌন নিপীড়নের দায়ে ইংহাম কাউন্টির এক ব্যক্তির ২০ বছরের কারাদণ্ড ওয়েইন কাউন্টি ১০০টি এয়ার কোয়ালিটি মনিটর চালু করেছে নরসিংদীতে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে গায়ক পিয়ালসহ নিহত ২ ডেট্রয়েট নিউজ রিপোর্টার সারা রাহাল মনোনীত প্রধান রাস্তার কাজের জন্য ২২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ লিভোনিয়ায় বিনামূল্যের কমিউনিটি কলেজের পরিকল্পনা করছেন হুইটমার আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ আসামির যাবজ্জীবন, ৬ জন খালাস চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, পাইলট নিহত মিশিগানে ১১ টর্নেডোর আঘাত, বাড়ি-ঘর ধ্বংস মিশিগানের তিনটি টর্নেডোর আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চুক্তি না হলে ধর্মঘটের অনুমতি দিয়েছেন ওয়ারেন স্ট্যাম্পিং কর্মীরা গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা আসছে অঞ্জলি লহ মোর হে প্রিয় কবিগুরু আজ মেট্রো ডেট্রয়েটে বজ্রসহ বৃষ্টি ও টর্নেডোর শঙ্কা আই ৭৫-এ গাড়ি দুর্ঘটনায় ৪ বছরের শিশু নিহত ডেট্রয়েটে রক্ষণশীল দলের কনভেনশনে মূল বক্তা ট্রাম্প ফোর্ট গ্রেটিওট টাউনশিপের হোম ডিপোতে বোমা হামলার হুমকি ডেট্রয়েটে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ২, আহত ১ 

হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের সুগন্ধি ধান

  • আপলোড সময় : ২১-০৫-২০২৩ ০৩:০৩:১১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২১-০৫-২০২৩ ০৩:০৩:১১ পূর্বাহ্ন
হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের সুগন্ধি ধান
সুনামগঞ্জ, ২১ মে : হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলাকে বলা হয়ে থাকে বোরো ফসলের ভান্ডার। জেলায় ছোট-বড় অন্তত ১৩৫টি হাওর রয়েছে। হাওরের প্রধান ফসল বোরো ধান। হাওরগুলো ‘বোরো ফসলী হাওর’ হিসেবে পরিচিত। বোরো জমির হাওর হলেও কালের বিবর্তনে ও সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে বোরোসহ দুই শতাধিক দেশি জাতের ধান। হাওর এখন উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড ধানের দখলে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোমের দাবি, বোরো ধানের ফলন কম হওয়ায় ও হাইব্রিড ধানের ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা হাইব্রিড ধান বেশি চাষবাদ করছেন। তবে চলতি বোরো মওসুমে হাওরে ১৩৭০ হেক্টর জমিতে দেশি জাতের ধান চাষ হয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি’র) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির বললেন,‘ হাওরের যেসমস্ত দেশি জাতের ধান চাষাবাদ হতো সেগুলো হারিয়ে গেছে তা সঠিক নয়। অতীতে বাংলাদেশে যত জাতের ধান চাষ হত সেসব ধানের বীজ জিন ব্যাংকে সংরক্ষিত আছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জের ১৩৫ টি ছোট-বড় হাওরে চলতি বোরো মওসুমে দুই লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে। ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মে. টন। যার বাজার মূল্য ৩৮০০ কোটি টাকা। চলতি মওসুমের দুই লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমির মধ্যে ২৮ ভাগ হাইব্রিড, ৭১ ভাগ উফশি ও প্রায় এক ভাগ দেশি জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে। হাইব্রিড ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর, উফশি এক লাখ ৬০ হাজার ৫৬৫ হেক্টর ও ১৩৭০ হেক্টর জমিতে দেশি জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে।
জানা যায়, হাওরে একসময় প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির দেশি জাতের ধান চাষ হতো। বোরো, বগলা বোরো, কইয়া বোরো, জগলি বোরো, লতা বোরো, গিজাবিরো, খইয়া, রাতা, সোনারাতা, খাগরাতা, বিচিবারই, কন্দী বিচিবারই, বানাজিরা, টেপি, রঙ্গিলা, রঙ্গিলা টেপি, সাধু টেপি, সাদাবিরন, কালাবিরন, নলবিরণ, গচি, ছোট গচি, বড় গচি, বেগুন বিচি, কটকইট্টা, বোনাভাতা, লিচুবিরণ, লাকাই, লতাটেপি, চন্দ্রী, সাধু, গাচমল, মাশিন, বাঁশফুল, তুলসীমালা, গই বিশাল, ঠাকরি, লালটেপি, লাল ডেঙ্গি, বিকিন, গজারি, বর্ণজিরা, শাইল, জিরা শাইল, কচুশাইল, গবি শাইল, আসান, অসিম, বিদিন, ফটকা, কাউলি, তায়েফ, রায়েন, আয়না মতি, বইয়াখাউরি, পাইজং, বেগম পেচিসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির বোরো জাতের ধান চাষ হতো।
আমন সওসুমে দুধজ্বর, বাজলা, মুগি, আশানিয়া, দেপা, বিরল, মোটংগা, আশা, গাজী, খামা, গুতি, কলামখনিয়া, খুকনি শাইল, কইতাখামা, জোয়াল কোট, মাতিয়ারি, আইকর শাইল, ময়না শাইল, গোয়াই, মুগবাদল, চেংরামুরি, তেরব আলী, কাচালত, ময়নামতি, পানিতারং, চাপলাশ, পানিলড়ি, আশকল, পুঁথিবিরণ, ঝরাবাদল, নাপতা, কটকটিয়া, খইয়া আমন, ডেপা খাগা, কলামাকনি, ধলামাকনি, যদুবিরন, মধুবিরন, মধুবাধব, ফুলমালতি, কলারাজা, খাসিয়াবিন্নি, পুরাবিন্নি, গান্ধি শাইল, হলিনদা মেথি, কলাহিরা, সোনাঝুরি, হাতকড়া, ঘোটক, অগি ঘোটক, চাপরাস, নাগা ঠাকুরভোগ, গোয়ারচরা ধান চাষ হতো। 
এ ছাড়া আউশ মওসুমে কিছু এলাকায় মুরালি, দুমাই, মারকা, মোরালি, বগি, দোয়ালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ধান চাষ হতো।  দেশি জাতের কাব্যিক নামের এসব ধান হাওর অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করত। উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান প্রতি কেদারে ২০-২৫ মণ পাওয়া গেলেও দেশি জাতের ধানের ফলন হয় মাত্র ১০-১২ মণ। ফলন কম হওয়ায় দেশি ধানের চাষাবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন কৃষকরা।
শাল্লা উপজেলার ডুমরা গ্রামের কৃষক সুধাকর দাস বলেন,‘ শাইল-বোরোসহ দেশি জাতের ধানের ফলন কম হওয়ায় ও লম্বা ধান কাটতে সময় বেশি লাগায় এসব ধান করতে কেউ আগ্রহী হয় না। দেশি ধানের ভাল বীজও বাজারে পাওয়া যায় না। শুধুমাত্র নিজেদের খাওয়ার জন্য কিছু ধান চাষ করা হয়। তিন কেদার জমিতে ‘খাগরাতা’ করে ৩৬ মণ ধান পেয়েছি। তবে একই জমিতে হাইব্রিড ধান করলে দ্বিগুন ধান পাওয়া যেত। ’
তাহিরপুর উপজেলার পাঠবুকা গ্রামের কৃষক রিপচান হাবিব বললেন,‘ দেশি ধানের ফলন কম হলেও কিছু সুবিধা আছে। এই ধান চাষাবাদে ব্যয় কম, রোগ প্রতিরোধী, সার-কীটনাশক লাগে না, কম সময়ে পাকে, পর্যাপ্ত পরিমান জিংক আছে, খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। আমি শাইল, বোরো, রাতা ও লাকাই ধান চাষ করেছিলাম। ফলন গড়ে প্রতি কেদারে ১১ মণ পাওয়া গেছে। ফলন কম হওয়ায় ও বাজারে ভাল মানের বীজ না পাওয়ায় দেশি ধান হারিয়ে যাওয়ার পথে। উচ্চতা কমিয়ে ফলন বাড়ানো সম্ভব হলে কৃষকরা দেশি ধান চাষে আগ্রহী হবেন। এবিষয়ে ধান
গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি বিভাগকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। ’
জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ছয়হারা গ্রামের বাসিন্দা করুনা সিন্ধু তালুকদার (৯০) বলেন,‘ আগে খুব সুন্দর সুন্দর নামের দেশি জাতের ধান ছিল। এসব জাতের ধানের চাল খেতেও খুব সুস্বাদু ছিল। দেশি জাতের ধান করে যে ফলন পাওয়া যায় সেই ধান বিক্রি করে চাষাবাদের খরচই পাওয়া যায় না। তবে বীজের অভাবে অনেকেই এই ধান করতে পারে না। কেউ কেউ শুধুমাত্র শখের বশে দেশি ধান চাষ করে। ’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন,‘ হাওরে দিন দিন উফসী ও হাইব্রিড ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা সুগন্ধী চাল খেতে আগ্রহী তাঁরা কিছু স্থানীয় জাতের ধান চাষ করছেন। ফলন কম হওয়ায় এসব জাতের ধানের চাষ কমে যাচ্ছে। ফলন বেশি পাওয়ায় আশায় চাষীরা নতুন জাতের ধান চাষ করছেন। তবে এই বছর প্রায় একভাগ জমিতে ১০ জাতের দেশি ধান চাষাবাদ হয়েছে। কোন কৃষক যদি দেশি জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহী হয় বীজ সংগ্রহে আমরা সহযাগিতা করব।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব¡ ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বললেন,‘হাওর অঞ্চলে আদি বা দেশি দুই-আড়াইশত জাতের ধান ছিল। উচ্চ ফলনশীলের প্রভাবে দেশি জাতের ধান হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশি জাতের ধানের অনেক উন্নত বৈশিষ্ট আছে। যা দিয়ে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত তৈরি করা সম্ভব। দেশি জাতের ধান বাষ্টসহ রোগ প্রতিরোধী ও জিংক সমৃদ্ধ। সরকারের উচিত দেশি জাতের বীজ সংরক্ষণ করা ও কৃষকদের সরবরাহ করা।’
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির বলেন,‘ উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষকরা দেশি জাতের ধান চাষাবাদ করছেন না। অতীতে বাংলাদেশে যত জাতের ধান চাষ হতো সেই ৮৬০০ জাতের ধানের বীজ জিন ব্যাংকে সংরক্ষণে আছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র ও আমেরিকায় জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করে রাখা আছে। দেশি জাতের ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সুগন্ধ ও জাত ঠিক রেখে আমরা ব্রি-ধান ১০৪ উদ্ভাবন করেছি। এটা দেখতে দেশি ধানের মত চিকন ও সুগন্ধী। এটার ফলন বিঘা প্রতি ২৪/২৫ মণ পাওয়া যায়। আগামী মওসুমে এই ধানের বীজ বাজারে পাবেন কৃষকরা। গচি, রাতা, শাইলসহ আগের দেশি জাতের ধানের চেহারা ও সুগন্ধ রেখে নতুন ধান উদ্ভাবনের কাজ চলছে। নতুন উদ্ভাবিত ধানের চেহারা দেখতে একই হবে ও সুগন্ধ থাকবে এবং ফলন অনেক বেশী হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
ফ্ল্যাক্স এন গেইট এমপ্লয়ী ফয়সল আহমদের জন্মদিন উদযাপন

ফ্ল্যাক্স এন গেইট এমপ্লয়ী ফয়সল আহমদের জন্মদিন উদযাপন